প্রকাশিত: ২২/১১/২০১৫ ৪:০৪ অপরাহ্ণ
ফাঁসি কার্যকর করা হয় যেভাবে

fasi
নিউজ ডেস্ক : ফাঁসি দেয়ার আগে কনডেম সেলে গোসল করিয়ে কারাগারের মাওলানার মাধ্যমে তওবা পড়িয়ে নেন কারা কর্তৃপক্ষ। এ সময় আসামির কাছ থেকে তার শেষ কোনো কথা থাকলে তাও জেনে নেন কারা কর্তৃপক্ষ। ধর্মীয় রীতি অনুসারে তওবা পড়ান কেন্দ্রীয় কারাগার মসজিদের পেশ ইমাম। এর আগেই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন কারা চিকিৎসক। সিনিয়র জেল সুপার রাতেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে জানিয়ে দেন। আসামিকে বলা হয় এটাই আপনার শেষ রাত- এখন আপনাকে তওবা পড়ানাে হবে। মাওলানা আসামিকে বলেন, আপনার কৃতকর্মের জন্য আদালত আপনাকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন। আপনি একজন মুসলমান ব্যক্তি। এ কারণে আপনি আল্লাহ’র এই দুনিয়ায় কৃতকর্মের জন্য তওবা করেন। এরপর ইমাম তাকে তওবা পড়ান। তওবা পড়ার মিনিট দশেক পর কনডেম সেলে জল্লাদরা আসেন এবং আসামিকে নিয়ে যান ফাঁসির মঞ্চে। আগে থেকেই মঞ্চের পাশে রাখা হয় মরদেহ বহনের অ্যাম্বুলেন্স। ফাঁসির মঞ্চে নেয়ার পর তার মাথায় পরানো হয় একটি কালো রংয়ের টুপি। এই টুপিটিকে বলা হয় ‘যমটুপি’। ফাঁসির মঞ্চে তোলার পর আসামির দুই হাত পেছন দিকে বাধা হয়। এ সময় ফাঁসির মঞ্চের সামনে উপস্থিত থাকেন কারা কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন ও ম্যাজিস্ট্রেট। ফাঁসির মঞ্চে প্রস্তুত থাকেন জল্লাদও। মঞ্চে তোলার পর আসামির দুই পা বাধা হয়। এরপরই পরানো হয় ফাঁসির দড়ি। কারা কর্তৃপক্ষের হাতে থাকে একটি লাল রুমাল। নির্দিষ্ট সময় হলেই রুমালটি হাত থেকে নিচে ফেলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জল্লাদ ফাঁসির মঞ্চের লিভারে টান দেন। লিভারটি টান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফাঁসির মঞ্চের নিচে চলে যায় আসামির মৃতদেহ। এ সময় আসামি মাটি থেকে ৪-৫ ফুট শূন্যে ঝুলে থাকে। এ মুহূর্তের মধ্যেই তার ঘাড়ের হাড় ভেঙে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলানোর আগে ব্রিটিশ আমলের তৈরি ম্যানিলা রোপ (দড়ি) পিচ্ছিল করে জল্লাদরা। ম্যানিলা রশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা। রশিতে মাখানো হয় তেল আর পাকা কলা। যে পাটাতনটির উপর কয়েদীকে দাঁড় করানো হবে সেই পাটাতন পরীক্ষ-নিরীক্ষা করা হয় কয়েক দফায়। পাটাতন ও রশির কপিকলগুলোতে দেয়া হয় বিশেষ ধরনের তেল। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কোনার দিকে রয়েছে ফাঁসির মূল মঞ্চ। ফাঁসির মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ও প্রস্থ সাড়ে ৪ ফুট। পাশাপাশি দু’জন দণ্ডপ্রাপ্তের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যবস্থা রয়েছে ফাঁসির মঞ্চে। মঞ্চের উপরে যে ফাঁসির কাষ্ঠ তার উচ্চতা ৮ ফুট। আর মঞ্চ থেকে নিচের দিকে যে গর্ত আছে তা ১২ ফুট গভীর। গর্তটি কাঠের পাটাতন দিয়ে ঢাকা। ফাঁসি কাষ্ঠের লাগোয়া উত্তর দিকে আছে কপিকলের গিয়ার। এই কপিকলের সঙ্গে ফাঁসির দড়ির একপ্রান্তে লাগানো থাকে। যেই দঁড়ি দিয়ে ঝুলানো হবে সেটা থাকে ফাঁসির কাষ্ঠের আরেক প্রান্তে। কপিকলের গিয়ারের দায়িত্ব থাকে একজনের কাছে। তার পাশে পূর্ব দিকে আরও তিনজন অবস্থান নেন। মূল মঞ্চসহ পুরো ফাঁসির মঞ্চটি আরও বড়। মূল মঞ্চের পূর্ব দিকে রয়েছে ৩টি কনডেম সেল। দক্ষিণে একটি লম্বা টেবিল আছে, যার পাশে বসতে পারেন অন্তত ১০ জন। তার সামনে আরেকটি টেবিল থাকে, যাতে ফাঁসি কার্যকর করার পর রাখা হয় মৃতদেহ। ফাঁসি কার্যকর করার সময়ে সতর্ক প্রহরায় অবস্থান নেয় অন্তত ১০ জন সশস্ত্র কারারক্ষী। সবার হাতে থাকে ভারি আগ্নেয়াস্ত্র। একটি ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট। আনুষ্ঠানিকতা শেষে মূল ফাঁসির মঞ্চে সময় নেয় ১৭ মিনিট। মূল ফাঁসির মঞ্চের কাছেই আছে তিনটি কনডেম সেল। ফাঁসি দেয়ার আগে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে রাখা হয় এই কনডেম সেলেই। কনডেম সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চের দূরত্ব ৫০ গজেরও কম। জল্লাদরা কনডেম সেল থেকে দণ্ডিতকে হাঁটিয়ে নেন মূল ফাঁসির মঞ্চে। ফাঁসির মঞ্চের কপিকলের গিয়ারের কাছে অবস্থান নেয়া ব্যক্তিরা প্রস্তুত হন। জলাদরা ফাঁসির রজ্জু পরিয়ে দেয় দণ্ডিতের গলায়। কনডেম সেল থেকে মঞ্চ পর্যন্ত এসব আনুষ্ঠানিতা সম্পন্ন করে একজন কয়েদিকে নিতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ মিনিট। ১৭ মিনিট ঝুলিয়ে রাখার পর নিচের দিকে থাকা গর্তের গেট দিয়ে গর্তের ভেতরে প্রবেশ করেন জল্লদরা। মরদেহ আবার গর্ত থেকে টেনে মঞ্চে ওঠানো হয়। তারপর দড়ি খুলে মরদেহ রাখা হয় সরকারের প্রতিনিধি ও কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সামনে রাখা টেবিলে। লাশ নেয়া হয় পাশের মর্গে। স্পাইনাল কর্ড ও হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। তারপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এভাবে আধা ঘণ্টায় শেষ হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যাবতীয় আনুষ্ঠনিকতা। এদিকে ফাঁসি কার্যকর করার সময় ফাঁসির মঞ্চে ও কারাগারের ভেতরে থাকেন আইজি (প্রিজন), অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন), ডিআইজি (প্রিজন), ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, জেলারসহ অন্য কারা কর্মকর্তারা। থাকেন ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকার সিভিল সার্জন, কারাগারের চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং ডিএমপি কমিশনারের প্রতিনিধি ডিসি-ডিবিসহ অনেকেই। ডিএমপি’র জয়েন্ট কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, ডিসি-ডিবি, র‌্যাবের ইন্টিলিজেন্স প্রধান এবং ডিবি’র বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার।

পাঠকের মতামত

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

সফরে বিনোদনের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে উখিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা

পলাশ বড়ুয়া:: উখিয়া কলেজের বার্ষিক শিক্ষা সফর-২০২৫ সম্পন্ন হয়েছে আজ। নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে প্রায় ...